র‍্যান্সমওয়ার (Ransomware) -- এক ভয়াল সাইবারআতঙ্ক -- আসছে ধেয়ে !!


র‍্যান্সমওয়ার (Ransomware) -- এক ভয়াল সাইবারআতঙ্ক -- আসছে ধেয়ে !!

বেশ আরামেই ছিলেন। এখানে ওখানে লাইক দিয়ে বেড়াচ্ছিলেন। কেউ কোনো লিংক পাঠালে হামলে পড়ে ক্লিক করে নিচ্ছিলেন মজা। ইমেইলে হোক বা মেসেঞ্জারে, কতো কিছু দেখার আছে, যাই পান, তাই ক্লিকান, শেয়ারান, লাইকান। কী আরামের জীবন, তাই না?

হঠাৎ করে আপনার কম্পিউটারের সবকিছু কেমন ঝাপসা হয়ে এলো। স্ক্রিনে একটা উইন্ডো ওপেন হয়ে গেলো। সেখানে কাউন্ট ডাউন হচ্ছে। আর আছে বার্তা। আপনার জন্যই একটা বার্তা।

"এই কম্পিউটারের সব ফাইল এখন আমাদের দখলে। সবগুলা ফাইল এনক্রিপ্ট করে দুর্বোধ্য করে দেয়া হয়েছে। যদি পেতে চাও, তাহলে জলদি জলদি ১ সপ্তাহের মধ্যে আমাদের ঠিকানায় বিট কয়েনের মাধ্যমে ৫০০ ডলার পাঠাও। তাহলে তোমার ফাইল ফেরত পাওয়ার গুপ্ত চাবি বা key দেয়া হবে।

তোমার সময় সীমিত। আর পুলিশকে বলে কিচ্ছু হবে না, তারা কিচ্ছু করতে পারবেনা, কিন্তু ১ সপ্তাহ পেরুলে তোমার সাধের সেলফি, দরকারি ডকুমেন্ট, কিছুই আর কোনোদিন ফেরত পাবে না"।

ঘাবড়ে গিয়ে জলদি জলদি আপনার ফটো ফোল্ডারে গেলেন, আসলেই তো, কিছুই তো নাই। মানে আছে বটে, কিন্তু প্রত্যেকটা ফাইলের এক্সটেনশন পাল্টে গেছে, আর রিনেম করে খোলার চেষ্টা করেও খুলতে পারছেন না। আপনার ডকুমেন্ট ফোল্ডারেরও একই অবস্থা। কিছুই পড়া যাচ্ছেনা, সব দুর্বোধ্য।

ঘটনাটা কী? ঘটনা হলো আপনি শিকার হয়েছেন র‍্যান্সমওয়ার নামের নতুন ধরনের ভাইরাসের।

এক কালে ভাইরাস কিছুই করতো না, স্ক্রিনে হাবিজাবি মেসেজ দিতো, আর বেশি খাইস্টা হলে ফাইলের মধ্যে ঢুকে বসে থাকতো। কিন্তু সে ছিলো সাইবারক্রাইমের প্রাথমিক আমল। ভাইরাস লিখতো বোরড হয়ে যাওয়া টিনেজ বয়সী ছেলেপেলেরা। সেই আমল আর নাই, এখন প্রকৃত অপরাধীরা নেমেছে মাঠে। তাদের লক্ষ্য চাঁদাবাজি, আপনার জিনিষপত্রকে জিম্মি করে রেখে টাকা আদায়। মজার ভিডিও দেখার লোভে নানান লিংকে ক্লিক করে আপনি দিব্যি তাদের টোপ গিলছেন, আর তাদের রানসমওয়ার ভাইরাস ঢুকে গেছে আপনার কম্পিউটারে। একবার ঢোকার পর এর কাজ হলো কম্পিউটারের সব ফাইলকে এনক্রিপ্ট করে ফেলা বা দুর্বোধ্য করে দেয়া। সেই সব ফাইল আগের অবস্থায় পেতে হলে একটি জটিল সংকেত বা key লাগবে, যা আন্দাজে বের করা সম্ভব না কারো পক্ষে, কেবল অপরাধীদের কাছেই আছে সেটা। ব্যাস, এটা একবার করে ফেলার পরেই আপনাকে দেয়া হবে সেই চাঁদা চেয়ে চিঠি। দুঃখজনক হলো, অন্যান্য ভাইরাস নাহয় এন্টিভাইরাস দিয়ে সরানো সম্ভব, কিন্তু রানসমওয়ারে এনক্রিপ্ট বা দুর্বোধ্য হওয়া ফাইল কোনোভাবেই ফেরত পাবেন না, যদি না আপনার কাছে সেই সাংকেতিক চাবি বা key থাকে।

ফলে আপনি নাচার, এই অপরাধীদের টাকা দেয়া ছাড়া আর কোনো উপায় নাই। আর এরা টাকাটাও নেয় ডিজিটাল কারেন্সি বিট কয়েনে, যা কোনোভাবেই ট্রেস করা যায় না কে কীভাবে নিয়ে গেছে। টাকা দিতে না পারলে ১ সপ্তাহ পরে তাদের চাহিদা আরো বাড়বে, এবং আর কিছুদিন পরে চিরতরে আপনার ফাইলগুলা হারাবেন।

এই সমস্যা রীতিমত মহামারী আকারে ছড়িয়ে পড়ছে, এবং এর সহজ কোনো সমাধান নাই। আমেরিকার এক হাসপাতালের সব ফাইল, রোগীর তথ্য কিছুদিন আগে গায়েব হয়ে গেছে এইভাবে, তারা হাজার হাজার ডলার দিয়ে ফেরত পেয়েছে। আরেক জায়গায় বাঘের ঘরে ঘোগের বাসার মতো এক পুলিশ বিভাগের সব রেকর্ড এভাবে অপরাধীরা জিম্মি করে রেখেছিলো, পুলিশ শেষ পর্যন্ত ৮ হাজার ডলার দিয়ে ফেরত পেয়েছে তাদের ফাইল। সাধারন ইউজারেরা ৩০০ থেকে ৫০০ ডলার দিয়ে তবেই ছাড়া পাচ্ছেন। আর এই পুরা জিনিষটা নিয়ন্ত্রন হচ্ছে পূর্ব ইউরোপ, এশিয়া, এবং অজানা জায়গার সব অপরাধী মাস্টারমাইন্ডদের হাতে।

বাংলাদেশে রান্সমওয়ার কতটা ছড়িয়েছে জানি না, কিন্তু অচিরেই এটা বাংলাদেশে বড় একটি সাইবারক্রাইম হিসাবে দেখা দিবে বলে আশংকা করছি। কাজেই সময় থাকতে সাবধান হন, নিজের ছবি, ফাইলের ব্যাকাপ রাখুন পেন ড্রাইভে বা ইন্টারনেটের সাথে সংযোগ নাই এমন জায়গায়, আর এখানে সেখানে ক্লিকানো, লাইকানোর বদভ্যাসটা বাদ দেন।

রান্সমওয়ার আইলো ... সবাই সাবধান ...

Source : Ragib Hasan FB page 

Post a Comment

Previous Post Next Post